গর্ভবতী হলে তা বুঝার বেশ কিছু শারিরীক লক্ষণ আবার অনেক সময় পরীক্ষা আছে যার মাধ্যমে জানা যায়। মা হওয়া দুনিয়ার সব চেয়ে সুন্দর অনুভূতি, তাই কেউ মা হচ্ছে কিনা তা জানার প্রবল আগ্রহ থাকে৷ তাই জেনে নিন কি করলে জানা যাবে বা কি লক্ষণ থাকলে একজন গর্ভবতী কিনা তা বুঝা যাবে। তাই এই পোষ্টে গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ বাংলা ভাষায় আলোচনা শুরু করলাম।
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ
আপনার যদি মাসিক অনিয়মিত থাকে তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন না কখন গর্ভবতী হচ্ছেন, যদিও ডিম্বাণু নিষেকের পরপরই অনেকের লক্ষণ প্রকাশ পায় এছাড়া প্রায় সব নারী গর্ভবতী হওয়ার ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে বুঝতে পারেন যে তারা গর্ভধারণ করেছেন। এসময় এই বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়-
- মাসিক বন্ধ থাকা
- জ্ঞান হারানো
- বার বার বমি হওয়া বা বমির ভাব হওয়া
- মাথাঘোরা
- খাবারে অনীহা
- মেজাজের তারতম্য হওয়া
- ঘনঘন প্রস্রাব
- অবসন্ন বা ক্লান্ত লাগা
- স্তনে পরিবর্তন আসা
- হাল্কা রক্তপাত
- গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা
- শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবের তুলনায় বাড়া
- মাথা ধরা
- পেটে গ্যাস হওয়া
মাসিক বন্ধ হওয়া
মাসের ২৮-৩২ তম দিনের মধ্যে একজন নারীর ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। এই সময়ের মধ্যে যদি না হয় তবে অন্যান্য লক্ষণ গুলো মিলিয়ে নিলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কিনা। এক্ষেত্রে কারো পিরিয়ড অনিয়মিত হলে বুঝতে একটু অসুবিধা হয় তাই আপনার পিরিয়ড অনিয়মিত হলে শুধু পরবর্তী লক্ষণ গুলো মিলিয়ে নিন।
জ্ঞান হারানো
গর্ভধারণের ফলে শরীরে বাড়তি এনার্জির প্রয়োজন হয়, প্রেশার শুরুর দিকে লো থাকতে পারে কারো কারো, তাই কেউ যদি বিশেষ কোন কারণ ছাড়া অজ্ঞান হয় তবে পরীক্ষা করতে পারে যে সে গর্ভবতী কিনা।
ঘনঘন বমি বা বমি ভাব হয়ে থাকা
মর্নিং সিকন্যাস গর্ভবতী নারীদের সাধারণ লক্ষণ, সকালে ঘুম থেকে উঠলে বমি হয় বা বমির ভাব হয়ে থাকে। এই লক্ষণ গর্ভধারণের ৬ সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় আবার অনেকের ক্ষেত্রে তা ৪ সপ্তাহ থেকে হতে পারে। এই সময় শুধু সকালে নয়, অনেকের দুপুর বা রাত যে কোন সময় বমি হতে পারে। আরও হতে পারে বিশেষ কোন গন্ধ বা খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা।
মাথা ঘোরা
যেহেতু এই সময় বাড়তি হরমোনের চাপ আসে শরীরে, তাই অনেকের মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেয়৷ যা সাধারণ এই সময়ে,তাই বিশ্রাম নেয়া জরুরি। এই সময় যাতে মাথা ঘুরে পড়ে না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে নয় তো পড়ে গিয়ে ডেকে আনতে পারে বিপদ।
খাবারে অনীহা
গর্ভবতী হলে শরীরে বাড়তি এস্ট্রোজেন হরমোনের দেখা মেলে৷ সম্ভবত এই কারণে গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ে যার ফলে বিশেষ কোন খাবারে গন্ধ লাগতে পারে এবং মুখে অরুচি আসে। মুখে অরুচি আসার সাথে সাথে মুখে তামাটে স্বাদ অনুভব করা এবং দুর্গন্ধও হতে পারে।এমন হতে পারে আপনি একটা কোন খাবার খুব পছন্দ করতেন এবং বেশি খেতেন। কিন্তু গর্ভবতী হলে সে খাবারটা আপনার কাছে অসহ্য লাগতে পারে। মুখে দিলেই হতে পারে বমি।
এমন কেনো হয় তার সঠিক উত্তর আজো অজানা তবে ধারণা করা হয় গর্ভাবস্থায় শরীরের দ্রুত বেশ কিছু পরিবর্তন আসে যার ফলে এমন হয়।
মেজাজের তারতম্য
মুডসুইং বা মেজাজের উঠানামা নারীদের একটা সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে মাসিকের সময় এই সমস্যা বাড়ে কিন্তু গর্ভাবস্থায় শরীরে বেশ কিছু হরমোন একসাথে নানা ক্রিয়া করে বলে গর্ভাবস্থায়ও হতে পারে দারুণ মুডসুইং। গর্ভবস্থায় মস্তিষ্কে হরমোনের প্রবাহ বাড়ে বলেই অনেকের অতি আবেগ, রাগ, দুঃখ,হতাশা বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে৷ গর্ভবতী হওয়ার ১ মাসের মধ্যেই এসব লক্ষণ প্রকাশ পায়। যদি আপনার অবসাদ,বিষণ্ণতা বা আবেগপ্রবণতা আপনার নিয়মিত দায়িত্ব গুলো পালনে ও দৈন্দিন কাজে বেঘাত ঘটায় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত৷
ঘনঘন প্রস্রাব
গর্ভাবস্থায় হরমোনের কারণে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় যার কারণে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্রুত কাজ করে এর মধ্যে অন্যতম হলো কিডনি। কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায় দ্রুত মূত্রথলি পূর্ন হয় এবং প্রস্রাবের বেগ আসে বার বার। যা গর্ভাবস্থায় প্রথম ২-৩ সপ্তাহে খুবই সাধারণ ব্যাপার। এবং আপনার ভ্রুণের আকার যত বড় হবে তত আপনার জরায়ু বড় হতে থাকবে এর ফলে মূত্রথলিতে চাপ বেড়ে বার বার প্রস্রাবের প্রবণতা আরো বাড়তে পারে।
অবসন্ন বা ক্লান্ত লাগা
প্রজেস্টোরন হরমোনের প্রভাবে গর্ভবস্থায় ক্লান্ত লাগতে পারে। এ সময় মর্নিং সিকন্যাসে বার বার বমি হওয়াতে ও রাতে ঘনঘন প্রস্রাব হওয়াতে ঘুমের ব্যঘাত ঘটে যার ফলে শরীর ভেঙে আসে, ক্লান্ত লাগে। এই সমস্যা দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে কমে যায় ঠিকই কিন্তু পরবর্তীতে ওজন বৃদ্ধিতে শরীর ভারি হওয়াতে এবং গর্ভকালীন বিশেষ সমস্যার কারণে ঘুম কমে গিয়ে আবার এমন লাগতে পারে।
স্তনে পরিবর্তন আসা
মাসিকের সময় অনেকের স্তনের আশপাশে বা স্তনে ব্যথার লক্ষণ দেখা যায় যা গর্ভবস্থায় আরো তীব্র হতে পারে। এটি প্রথম দিকের একটি লক্ষণ, হরমোনাল কারণে স্তনের আয়তনও এই সময় পরিবর্তন হয়৷ দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে এটি কমে যেতে পারে। কারণ এই সময় থেকে মায়ের শরীর হরমোন পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়। দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার থেকে স্তনে বোটার দেখা দেয়। এই সময় স্তনের বোটায় চাপ দিলে হাল্কা তরল বেরিয়ে আসে। স্তনে হাল্কা ব্যথা হতে পারে বা শিরশিরে অনুভূতি হতে পারে যা মাসিকের সময়ও অনেকের হয়।
হাল্কা রক্তপাত
ডিম্বাণু নিষেকের ৬ দিন পর ইমপ্লান্টেশন হয় যার ফলে হাল্কা বাদামি রঙের রক্তপাত হয়। একে অনেকেই মাসিকের রক্ত মনে করতে পারে তবে ইমপ্লান্টেশনের ফলে রক্ত পড়া স্বভাবিক। তাই আপনি গর্ভবতী কিনা তা নিশ্চিত হতে এই রক্তপাতও একটি লক্ষণ। পিরিয়ড শুরু হওয়ার সপ্তা খানেক আগে এমন হলে প্রেগ্ন্যাসির টেস্ট করান। ফলাফল নেগেটিভ হলে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করে আবার করুন। গর্ভাবস্থায় প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন নারীর গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় রক্তপাত কোন গুরুতর সমস্যা নাও হতে পারে অন্য দিকে এটি গর্ভপাতেরও লক্ষণ। তাই এমন হলে ডাক্তার দেখানো উচিত।
গন্ধের প্রতি সংবেদনশীল
২-৪ সপ্তাহের মধ্যে নানা রকম গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখা দেয় এই সময় ভৌতিক গন্ধ পাওয়া থেকে শুরু করে খাবারে উদ্ভট গন্ধ পাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। এটির কারণও অজানা। আবার বিশেষ গন্ধ ভালো লাগার মত ব্যাপার ঘটে।
শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবের চেয়ে বেড়ে যাওয়া
গর্ভবতী হয়েছেন কিনা জানতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে পারেন। কমপক্ষে ১৮ দিন যদি আপনি আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়তি দেখেন তবে এটি গর্ভধারণের ইঙ্গিত ধরে নিন।
মাথা ধরা
গর্ভবস্থায় হরমোনের বাড়ার কারণে মাথা ধরার বা ব্যথার সমস্যা হতে পারে।
পেটে গ্যাস বাড়া
গর্ভবতী হলে পেট ফাপা বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা স্বাভাবিক লক্ষণ। যেমনটা মাসিকের আগে আগে হয়ে থাকে৷ এই সময় পেটে গ্যাস হয় বলে উদ্বিগ্নতার কোন কারণ নেই। গর্ভবস্থার একপর্যায়ে এসে এটি ঠিক হয়ে যায়।
শেষ কথা
এই সকল লক্ষণ গর্ভাবস্থায় সকল নারীরই হয়ে থাকে৷ তবে এদের মধ্যে যে কোন একটি দুটি একসাথে থাকলেই যে আপনি গর্ভবতী হয়েছেন এমন নয়। তাই এই সকল লক্ষণ গুলির কয়েকটি দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন অথবা নিজেই বাড়িতে টেস্টিং কীড এনে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন।
আশাকরি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে। স্বাস্থ সম্পর্কিত আরো পড়তে ভিজিট করুন।