ইসুজন এর আরেকটি নিয়মিত ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। এই ব্লগটি পড়ে আপনি রোবট/ রোবটিক্স কি, রোবটিক্স এর গুরুত্ব এবং শেখার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
একই ব্লগ পোষ্টে আপনি জানতে পারবেন রোবটিক্স এর বৈশিষ্ট্য, ধারণা ও প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন তাহলে শুরু করা যাক এখান থেকেই।
রোবটিক্স কি?
টেকনোলজির যে শাখায় রোবটসমূহের ডিজাইন, নকশা,নির্মান,গঠন,কার্যক্রম ও প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হয় সেই শাখাকেই রোবটিক্স বলা হয়।রোবোটিকস বা রোবটবিজ্ঞান মূলত রোবট নিয়ন্ত্রণে কম্পিউটার সিস্টেম এবং কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রসমূহ ডিজাইন ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিজ্ঞান।
রোবট বলতে কি বোঝায়
রোবট হলো কম্পিউটার দ্বার প্রোগ্রামযোগ্য একটি সয়ংক্রিয় ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র যা জটিল এবং ধারাবাহিক কার্যকলাপ সম্পাদন করতে সক্ষম। রোবট যেকোনো বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ ডিভাইস দ্বারা পরিচালিত হতে পারে, অথবা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এম্বেড করা যেতে পারে।
রোবটিক্স শব্দের ইতিহাস
রোবটিক্স এর জনক বলা হয় জর্জ ডেবলকে। তিনিই সর্বপ্রথম ডিজিটাল ও প্রোগ্রামেবল রোবট আবিষ্কার করেন। সর্বপ্রথম প্রারম্ভিক তামিলরা খ্রিস্টপূর্ব 7000 এ দাঁতের নম ড্রিল নামক এক রোবট আবিষ্কার করেছিলেন দন্ত চিকিৎসার জন্য।
এভাবে পর্যায় ক্রমে রোবটের আবিষ্কার এবং ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯২০ সালে প্রকাশিত চেক লেখক ও নাট্যকার কারেল কাপেল এর একটি নাটক থেকে ‘রোবট’ শব্দটি প্রবর্তিত হয় এবং এই রোবট থেকেই রোবটিক্স শব্দটি এসেছে।
রোবটিক্স এর গুরুত্ব
প্রযুক্তি দিনের পর দিন পরিবর্তন এবং বিস্তৃত হচ্ছে। এছাড়া ও লোকেদের সঠিক প্রচেষ্টা এবং তাদের একাগ্রতা এই পরিবর্তনকে আরো দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে অনেক স্কুলে বাচ্চাদের এখন থেকেই রোবটিক্স এর গুরত্ব এবং শেখার উপকারিতা সম্পর্কে শিক্ষা দিচ্ছে। যাতে করে শিশুরা বর্তমান বিশ্বে নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে আগে থেকেই ধারনা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। নিম্নে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হলো :-
১. রোবটিক্স আমাদের সৃজনশীলতা বিকাশে সাহায্য করে। রোবটিক্স সম্পর্কে জানতে হলে শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তক এ মুখ গুঁজে পরে থাকলে কখনোই রোবটিক্স সম্পর্কে আমরা জানতে পারব না। এর জন্য প্রয়োজন নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে প্র্যাকটিক্যালি কাজ করা। প্র্যাকটিক্যালি কাজ করায় তারা নতুন নতুন চিন্তা করতে পারবে রোবটিক্স সম্পর্কে এবং সময়কে সঠিক ভাবে কাজের মধ্যে ব্যস্ত থেকে ব্যয় করতে পাবরে। রোবটিক্স এর গুরুত্ব সম্পর্কে এটা হতে পারে প্রাথমিক উদাহরণ।
২. বিজ্ঞান, প্রযুক্তি,ইঞ্জিনিয়ার এবং গনিত এই বিষয় গুলোকে মজাদার করে তোলে রোবোটিকস শেখার মাধ্যমে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা এই বিষয় গুলোতে ভয় বা বিরক্তি না হয়ে আরো আগ্রহী হয়ে ওঠবে। যা তাদের শিক্ষা জীবনে অনেক বড় ভুমিকা পালন করে।
৩. সমস্যা সমাধান কারী হয়ে উঠে। রোবটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করা হয় এবং কম্পিউটার রোবটের সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। সকল রোবটের কাজের ধারা পূর্ব থেকে ঠিক করে দেয়া থাকে। রোবট শুধুমাত্র তাকে নিদের্শিত কাজের ধারা অনুযায়ী সাড়া দিয়ে থাকে। প্রত্যেকটি কাজের জন্য আলাদাভাবে নির্দেশনা রোবটের মেমোরিতে তৈরি করে দিতে হয়।রোবট অত্যন্ত দ্রুত ক্লান্তিহীন ও নিখুঁত কার্যক্রম একটি যন্ত। কোনো সামান্য ভুল হলে রোবট ঠিক মতো কাজ করতে পারবে না। তাই সঠিক মতো সব ইনফরমেশন দিতে হয়। এবং কোন সমস্যা হলে তা সমাধান ও করতে হয়। এভাবেই রোবোটিকস শিক্ষার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান কারীও হয়ে উঠা যায়।
৪. প্রোগ্রামার। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত করতে হলে ভাল প্রোগ্রামার হতে হবে। আর যেহেতু রোবট কম্পিউটার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত তাই রোবোটিকস শিখার মাধ্যমে প্রোগ্রামার নিয়েও কাজ করা যাবে। বর্তমান বিশ্বে একজন ভালো প্রোগ্রামার এর চাহিদা অনেক বেশি।
৫. ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী থাকা। নিঃসন্দেহে রোবোটিকস নিয়ে পড়াশোনা করে প্রযুক্তিনির্ভর যে কোনো কোম্পানিতে সহজেই কাজ করার সুযোগ থাকে।মিলিটারি সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রযুক্তি বিভাগ, মহাকাশ গবেষনায় ইত্যাদি অনেক শাখার জন্য রোবটের প্রয়োজন রয়েছে ।রোবটিক্স এ গ্রাজুয়েট ছাত্রছাত্রীরা কাজ করার জন্য বিভিন্ন কোম্পানি পছন্দ করতে পারেন।
৬. প্রযুক্তিনির্ভর ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে। রোবট কখনো একা তৈরি করা সম্ভব নয় তাই সফলভাবে রোবট তৈরি করতে হলে সবার সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।সবাই মিলে একসাথে আসতে হবে এবং সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।এতে করে সবার সাথে যোগাযোগ তৈরি হবে এবং নতুন নতুন আইডিয়া পাওয়া যাবে।
রোবটিক্স এর ভবিষ্যৎ
এর আগের অনুচ্ছেদ এ আমরা জেনেছি রোবটিক্স এর গুরুত্ব সম্পর্কে। এই অনুচ্ছেদ এ আমরা রোবটিক্স এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানবো। ধীরেধীরে রোবট মানুষের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে। একজন মানুষ তার নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে যেভাবে কাজ করে একটি রোবট তার তুলনায় অনেক বেশি এবং ভালোভাবে সে কাজ করতে পারে। দেখা যায় অনেক ভারী জিনিসপত্র মানুষ নিজে উঠাতে পারে না কিন্তু রোবট খুব সহজেই সেটা করতে পারে।
আবার রোবট হাজার হাজার ডাটা মেমোরিতে সংরক্ষণ করে রাখতে পারে কিন্তু মানুষের পক্ষে তা সম্ভব নয়।সুতরাং রোবট দিয়ে কাজ করে ভবিষ্যৎতে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন সিনেমাতে যে রোবট গুলো দেখতে পাই সেগুলো যদি বাস্তবে হয় তাহলে কেমন হবে বলতো?নিঃসন্দেহে অনেক ভালো হবে। তাহলে বর্তমান বিশ্ব এখন যেখানে আছে তার তুলনায় বহু গুন এগিয়ে যাবে।দৈনন্দিন কাজ সহজ হয়ে যাবে। কমার্শিয়াল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজ অনেক সহজ ও দ্রুত হয়ে যাবে।
রোবোটিকস শেখার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ বিশ্বকে নতুন এক চমক দিতে সক্ষম হবো যেখানে বিশ্ব হবে আরো আধুনিক এবং ডিজিটাল।
আশাকরি রোবট কি, রোবটিক্স এর গুরুত্ব এবং শেখার উপকারিতা সম্পর্কিত এই পোষ্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এই ধরণের আরো পোষ্ট পেতে আমাদের ফেজবুক ফেজ এ লাইক দিন এবং প্রযুক্তি সম্পর্কিত আরো পোষ্ট পড়তে ক্লিক করুন।