জীবনকে উন্নত করার জন্যে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়তে আমাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হয়, কিন্তু বাংলাদেশের মত মধ্যবিত্ত দেশে উচ্চশিক্ষার খরচ বেশি হওয়াতে বাংলাদেশের কিছু বেসরকারি ব্যাংক চালু করেছে শিক্ষা ঋণ। যা গ্রহণের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবন শেষ করতে সক্ষম এবং শিক্ষা পরবর্তী সময়ে তা পরিশোধ করতে পারে। এর মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষা ঋণ বেশ জনপ্রিয় ও সুবিধাজনক।
গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষা ঋণ কিঃ
বাংলাদেশের টেকনিক্যাল শিক্ষার খাত গুলো যেমনঃ ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যে গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কোর্সের মেয়াদ অনুসারে ৩৮ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করে থাকে। একেই গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষা ঋণ বলা হয়।
কেনো দেয়া হয়ঃ
গ্রামীণ ব্যাংক সহ যে সকল বেসরকারি ব্যাংক শিক্ষা ঋণ দিয়ে থাকে তাদের মূল উদ্দেশ্যেই হলো দেশে শিক্ষিত স্বাবলম্বী যুব সমাজ গড়ে তোলা। আমাদের দেশের নিম্নবিত্ত,নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নিতে এবং শিক্ষার মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়তে অনেকটাই হিমসিম খায়। অন্যদিকে শিক্ষাই এসব পরিবারের একমাত্র খুঁটি হয় , কেননা এর বাইরে আয়ের জন্যে অন্য অবলম্বন হলো ব্যবসা, যার পুঁজি ছাড়া আগানো সম্ভবই না। অন্যদিকে বাংলাদেশের এই ধরণের পরিবার গুলোর ব্যবসায়ীক মূলধন দেয়ার মত সক্ষমতা নেই বললেই চলে। তাই শিক্ষাকে পাথেয় হিসাবে নিয়েই আগাতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ব্যয় খরচ তুলনা মূলক বেশি বলে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যায়। এই ঝরে যাওয়া রোধ করতে এবং উন্নত, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ার উদ্দেশ্যে দেশের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে চালু করা হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষা ঋণ। যা একজন শিক্ষার্থী ছাত্রবস্থা শেষ করে পরিশোধ করতে পারবে।
কারা নিতে পারবে গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষা ঋণঃ
এই ঋণ নিতে পারবে কেবল মেডিক্যাল,ইঞ্জিনিয়ারিং, স্নাতক বিষয়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও এমএ/এমএস/এমবিএ/ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত ১৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা।
কি হারে প্রদান করা হয়
এমএস/এমবিএ/এমএ ২ বছর মেয়াদি কোর্সের শিক্ষার্থীরা দুই বছরে সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার টাকা, স্নাতক পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ৪ বছরে সর্বোচ্চ ৭৭ হাজার টাকা, ইঞ্জিনিয়ারিং ৪ বছর মেয়াদি কোর্সে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা ও ৫ বছর মেয়াদি এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করে এই ঋণ গ্রহণের সুযোগ পায়।
শিক্ষাঋণ নেয়ার শর্ত সমূহঃ
গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষাঋণ গ্রহণের জন্যে বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এগুলো হলো-
- গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষাঋণ গ্রহণের জন্যে অবশ্যই গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হতে হবে।
- সদস্যপদ কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে
- শিক্ষার্থীকে ২০-২৫ বছর বয়সী হতে হবে।
- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে হবে অথবা বিশেষ সেক্টরে অধ্যানরত হতে হবে।
- যদি কোন শিক্ষার্থীকে তার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২৫-৫০ শতাংশ টিউশন ফী মওকুফ করা হয় তবেই ব্যাংক এই ঋণ প্রদান করবে।
- শিক্ষাজীবন শেষ করে যত ঋণ হয়েছে তা মাসিক কিস্তিতে ভাগ করে পরিশোধ করতে হবে।
- ঋণ অনুমোদিত হওয়ার তিন মাস পর কার্যকর হবে।
- শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পরের মাস থেকে ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে।
শিক্ষাঋণের উপকারিতাঃ
উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যেই যেহেতু এই ঋণ আবেদন করা হয় তাই এই ঋণের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে। এই শিক্ষাঋণ ছাত্রবস্থায় পরিশোধ করতে হয় না। তাই শিক্ষার্থীর উপর কোন বাড়তি চাপ থাকে না। কেবল শিক্ষা জীবন শেষ হওয়ার পরের মাস থেকে মাত্র ৫% হারে সার্ভিস চার্জ প্রদান ও মাসিক কিস্তিতে অল্প অল্প করেই পরিশোধ করতে হয়। তাই চাপ কম থাকে। এছাড়া এই ঋণের পরিমাণ খুব একটা বেশি না হওয়াতে নিয়মিত কিস্তির মাধ্যমে তাড়াতাড়ি পরিশোধ করা যায়। এই ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষা ব্যয় বহন করার অক্ষমতার কারণে উচ্চশিক্ষার স্থলে কমেছে ঝরে পড়ার হার।
কিভাবে নেওয়া যাবেঃ
গ্রামীণ ব্যাংকের কমপক্ষে ১ বছর ধরে সদস্যপদ বিদ্যমান নূন্যতম ২০ বছর বয়সী যেকোন পাবলিক বা গ্রামীণ ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী গ্রামীণ ব্যাংক লোন অফিসারের কাছে গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে ঋণ আবেদন করতে পারবে। এক্ষেত্রে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আছে, ও আর্থিক অবস্থার বিস্তারিত প্রমাণাদি কাগজপত্র সহ দেখাতে হবে। সাধারণত ঋণ আবেদনের ৩ মাস পর তা কার্যকর হয়।