আপনি যদি অনুসন্ধান করে থাকেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রচনা ২০২৩ | মুজিব শত বর্ষ | শিশু দিবস উপলক্ষে তবে জেনে রাখুন সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। [ পোষ্টের বিষয়াবলী সংক্ষেপে: মুজিব বর্ষ প্রবন্ধ রচনা, প্রতিবেদন, প্রতিযোগিতা ২০২৩, ওয়েবসাইট। মুজিব বর্ষ রচনা 2023, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুচ্ছেদ প্রতিবেদন ও রচনা, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী,বঙ্গবন্ধু জন্ম শতবার্ষিকী, আমাদের প্রত্যাশা, শিশু দিৱসৰ বিষয়ে ৰচনা, জাতীয় শিশু দিবস সম্পর্কে রচনা, কেন পালিত হয়, এই নিয়ে কিছু কথা, মুজিব শতবর্ষ ইত্যাদি ] চলুন তাহলে শুরু করা যাক এখান থেকেই।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রচনা
আপনাদের কাঙ্খিত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রচনা অনুচ্ছেদ pdf এখান থেকে শুরু হচ্ছে। আপনি একই পোষ্ট শিশু দিবসের প্রতিবেদন, প্রবন্ধ হিসেবে ও ব্যবহার করতে পারবেন। তবে চলুন শুরু করা যাক।
ভূমিকা
বিশ্বে যে কজন মহান পুরুষ তাদের আঙুলের ইশারায় পুরো পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছিলো। বুকে ঢেউ তুলে ছিলো হাজারো জনতার। শুনিয়েছিলো বিশ্ব শান্তির বাণী। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন সে আর কেউ না আমাদের জাতীর পিতা, বিশ্ববরেণ্য নেতা বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সগৌরবে সম্মোহনী ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথম দিকে তাই তাঁরই স্থান। আপন মহিমায় তিনি মহিমান্বিত।
বঙ্গবন্ধুর পরিচয়
দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুনের কোল আলো করে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি পিতা-মাতার ৩য় সন্তান ছিলেন। বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গি পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পূর্বে গোপালগঞ্জের নাম ছিল ফরিদপুর।
বঙ্গবন্ধুর পড়াশোনা
ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিল বেশ মেধাবী। কিন্তু তিনি ছোট বেলায় বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বেশ কিছুদিন পড়াশোনা বন্ধ ছিল। তিনি প্রথম ১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার আরাম্ভ করেন। পরবর্তীতে ১৯২৯ সালে তাঁকে তাঁর পিতা ৯ বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি করান। অবশেষে তিনি মিশনারী স্কুল হতে পাঠ শেষ করেন।
অন্যদিকে বেরিবেরিতে আক্রান্ত হওয়াতে তিনি অন্তত চার বছর পড়াশোনা হতে দূরে থাকতে হয়। মিশনারী স্কুল হতেই তিনি প্রবেশিকা পাস করেন ১৯৪২ সালে। তিনি বিখ্যাত বেকার হোস্টেলে থেকে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন। এখান থেকে তিনি ১৯৪৪ সালে আই এ পাস করেন। এছাড়া তিনি ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বিএ পাস করেন। আইন নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে ছিল বঙ্গবন্ধুর। তাই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ১৯৪৮ সালে ভর্তি হোন।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারিদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলে এই নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে যান। যার ফলে আইন পাস না করেই তাকে পড়াশোনা শেষ না করেই মাঝ পথে সমাপ্তি টানতে হয়৷
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন
এক অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলি নিয়ে ধরায় এসেছিলেন বাঙালির মহান নেতা। তাই তো কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াতেন না। শৈশবে গ্রামের হত দরিদ্র মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখে ব্যথায় জর্জরিত হতেন বঙ্গবন্ধু। তাদের সাহায্য পাশে দাঁড়াতে কখনো কার্পণ্য করতেন না। অধিকার বঞ্চিত জনমানসের অধিকার আদায়ে সর্বদা ছিলেন সামনের সারিতে। তাইতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার ও পড়াশোনার স্বার্থের কথাও ভাবেন নি।
শোষন বিহিত এক সাম্যের পৃথিবী গড়তে তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটি স্বাধীন দেশের। যা তাকে পরবর্তীতে বাঙালীর জাতীয় আন্দোলন ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের রাজনীতিতে যোগ দিতে উৎসাহ দেন। এছাড়াও ছাত্র বয়সেই তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক,মাওলানা ভাসানীর মত নেতাদের কাছাকাছি ছিলেন। নিচে ধাপে ধাপে বঙ্গবনধুর রাজনৈতকি জীবন সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
[ads3]
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গন্ধু
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের বীজ বোনা হয়েছিলো ১৯৪৮ সালে তমুদ্দিন মজলিশ প্রতিষ্ঠার সময়। সে আন্দোলনে ডানা মেলে দেয় ১৯৫২ সালে। এই আন্দোলনের শরিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এবং কি জেলে গিয়ে তিনি সহযোগী মহিউদ্দিন কে নিয়ে আমরণ অনেশন শুরু করেন। এর পূর্বে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আইন পরিষদে ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা’ ঘোষণা দিলে তার সাথে সাথে প্রতিবাদ করেন বঙ্গবন্ধু।
২ মার্চ ফলুল হক হলে ভাষার প্রশ্নে একটি বৈঠক হয়। এই সভায় বঙ্গবন্ধু সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রহ পরিষদ গড়ার প্রস্তাব প্রদান করেন। ১১ মার্চ দেশ ব্যাপি হরতাল পালন করা হয়৷ বন্ধ করা হয় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সময় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করেন পাকিস্তান সরকার। জেলে থাকা অবস্থায় আন্দোলন তুমুল আকার ধারণ করলে জেল হতেই বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দেন ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাজ বন্দীদের মুক্তি এবং ভাষা দিবসের শহিদের স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করতে। তখন বঙ্গবন্ধু অনশনে ছিলেন। ১৬ ফেব্রুয়ারী হতে তিনি অনশন শুরু করেন।
১৪ দিন তিনি অনশনে ছিলেন। পরবর্তীতে ১৬ ফেব্রুয়ারিতে তাকে জেল হতে মুক্তি দেয়া হয়। এই সময় বঙ্গবন্ধুকে ফরিদপুর জেলে বন্দী রাখা হয়। এই বিষয় নিয়ে বায়ান্নর দিন গুলো শিরোনামে অসমাপ্ত আত্নজীবনী তিনি লিখে গিয়েছেন।
হ্যালো ভিউয়ার আপনি পড়ছেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রচনা ২০২২ সম্পর্কে। আপনি চাইলে এ সম্পর্কে আমাদের আরো পোষ্ট পড়তে পারেন।
৫৪ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রি হিসাবে গণপরিষদে প্রথম সদস্যপদ লাভ করেন বঙ্গবন্ধু। যা তার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম ঘটনা। এর ফলে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আরো আগায় এবং পরবর্তী রাজনৈতিক কাজ গুলোতে তিনি আরো উৎসাহ লাভ করেন।
৬ দফা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু
বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা উত্থান করা হয় ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুকে দিয়েই। ৬ দফার দাবি দেখে পাকিস্তান সরকার হতবিহবল হয়ে পড়ে বঙ্গবন্ধু সহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করে আলোচিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেন। এবং বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে। ৩ জানুয়ারি ১৯৬৬ সালে দায়ের করা এই মিথ্যে মামলার বিচার হয় ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যাপক গণ আন্দোলন গড়ে উঠে ১৯৬৯ এ যার পরিপ্রেক্ষিতে পতন ঘটে সামরিক সরকারের ও মুক্ত হয় আগরতলা মামলার আসামিদের।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান
বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তি ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৯৬৯ এ দেশ ব্যাপি গণ আন্দোলন শুরু হয়।১৯৬৯ সালে ৫ জানুয়ারি ৬ দফা আন্দোলন সহ ১১ দফা আন্দোলনের দাবিতে ‘কেন্দ্রী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়’। এই আন্দোলন ব্যাপকতা ধারণ করলে সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি মামলা প্রত্যাহার করা সহ সকল আসামীকে মুক্তি দেয়। এর পর ২৩ ফেব্রুয়ারী রেসকোর্স ময়দানে ‘কেন্দ্রী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ আয়োজিত এক সভায় বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দেয়। এই সময় তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেন ছাত্রনেতা ‘তোফায়েল আহমেদ’।
৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু
১৯৭০ এর নির্বাচনে অংশ গ্রহণের পূর্বে ৬ জানুয়ারি তিনি আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হোন। এরপরই তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নৌকা কে নির্বাচনী প্রতীক এবং জয় বাংলাকে স্লোগান করে এবং ঘোষণা পত্র হিসেবে ছয় দফা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করেন। যা জনপ্রিয়তা পায় বাংলার আনাচে কানাচে।
এই নির্বাচনে ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পায় পূর্বপাকিস্তানে। প্রাদেশিক আসনে ৩০০ টির মধ্যে মোট ২৮৮ পায় আওয়ামীলীগ। কিন্তু পাকিস্তানিরা নানা বাহানা দেখিয়ে জয় হওয়ার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর করে না।
১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধু
জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ এ অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু করে রেসকোর্স ময়দানের ভাষণের মধ্যে দিয়ে নানা ভাবে বাঙালি জাতীকে স্বাধীনতার সংগ্রামে উজ্জীবিত করেন। বিশেষ করে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে তিনি বাঙালি গণ মানুষকে মুক্তির সংগ্রামের আহবান জানান। ১৮ মিনিট ব্যাপি দেয়া এই ভাষনটি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা বিশেষ সম্মান দেয়।
৩০ অক্টোবর ২০১৭ সালে এই ভষণকে ইউনেস্কো “ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ” স্বীকৃতি দেয়। উক্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালির চারটি প্রাণের দাবি তুলে ধরেনঃ
- গণপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
- সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরতে হবে।
- গণহত্যার বিচার ও তদন্ত করতে হবে।
- সামরিক শাসন প্রত্যাহার করতে হবে।
এই ভাষণের বিখ্যাত উক্তি ” এবারের সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিব, তবুও এই বাঙালি জাতীকে মুক্ত করে ছাড়ব।”
বঙ্গবন্ধুর বজ্র কন্ঠে মুক্তির এই ডাক শুনে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অর্জিত হয় স্বাধীনতা।
যেভাবে শহীদ হলে
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, জনতার বন্ধুকে পাকিস্তানিদের উত্তরসূরী এই দেশীয় শয়তানেরা নির্মম ভাবে হত্যা করে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে তার ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে। এই সময় তার পরিবারে সকলকে হত্যা করা হয়, কেবল বিদেশে অবস্থানের কারণে তার দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা বেঁচে যান। মৃত্যু দুয়ারে এসে কড়া নাড়লেও সেদিনও বুক পেতে শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়াতে পিছপা হন নি বঙ্গবন্ধু। বীরের মত মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন৷
উপসংহার
বঙ্গবন্ধু নিয়ে অল্প কথায় বলে শেষ করা যায় না। তার জীবনী একটি মহাকাব্য। এই মহাকাব্য খচিত থাকবে বাঙালির হৃদয়ে হৃদয়ে। তার জন্মদিনে তাই আমাদের সকলের প্রতিজ্ঞা থাকা উচিত তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার। যাতে পরপারে বঙ্গবন্ধুর আত্না সামান্য হলেও আমাদের কাজে শান্তি পান।
আমাদের কথা
আশাকরি উক্ত পোষ্ট অবলম্বনে আপনি আপনার কাঙ্খিত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রচনা ২০২৩,মুজিব শত বর্ষ, শিশু দিবস সম্পর্কে খুঁজে পেয়েছেন। আমাদের পোষ্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যাবেন।