2019 সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ সরকার আমাদের দেশের মানুষদের জন্য ই-পাসপোর্ট সুবিধা চালু করেছে। আর সেই সময় থেকেই এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে ই-পাসপোর্ট (E-passport) এর সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। যারা মূলত নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন তাদের অবশ্যই ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে ধারণা থাকবে। কিন্তু আপনি এমন অনেক মানুষকে খুঁজে পাবেন যারা মূলত এখন পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট কি এবং ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম গুলো কি কি সে সম্পর্কে জানেনা।
আমার আজকের আর্টিকেলটি মূলত সেই মানুষদের উদ্দেশ্যেই লেখা হয়েছে। কারণ গুরুত্বপূর্ণ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ই পাসপোর্ট করার নিয়ম গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন।
তো যদি আপনি ই-পাসপোর্ট কি এবং কিভাবে ই-পাসপোর্ট করা যায় সে সম্পর্কে জানতে চান। তবে অবশ্যই আজকের পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে আজকের পর থেকে আপনার মনে ই-পাসপোর্ট রিলেটেড কোন প্রকার অজানা বিষয় থাকবে না। তাহলে আর দেরি না করে চলুন সরাসরি মূল আলোচনায় ফিরে যাওয়া যাক।
ই পাসপোর্ট কি? | What is E-passport?
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম গুলো সম্পর্কে তো অবশ্যই আমরা আলোচনা করব, কিন্তু সবার আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে যে এই ই-পাসপোর্ট আসলে কি। কারণ যখন আপনি এ বিষয়টি জানতে পারবেন তখন আপনার পরবর্তী আলোচনা গুলো বুঝতে সুবিধা হবে। তাহলে চলুন এবার আমরা ই-পাসপোর্ট কি সে সম্পর্কে জেনে নেই।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে বিশেষ এক ধরনের ইলেকট্রিক পাসপোর্ট কেই বলা হয়ে থাকে ই-পাসপোর্ট। মূলত আগেকার দিনে যেসব পাসপোর্ট ব্যবহার করা হতো সেগুলো একটি কাগজের মধ্যে সেই ব্যক্তির যাবতীয় তথ্যাদি লেখা থাকতো। এবং যখন সে ব্যক্তি বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন মনে করত তখন কাগজে লিখিত এই পাসপোর্ট গুলো প্রদান করতে হতো।
কিন্তু ই-পাসপোর্ট ক্ষেত্রে আপনার পরিচয় বহন করার জন্য একটি ইলেকট্রনিক চিপ লাগানো থাকবে। যেই চিপ এর মধ্যেই কোন একজন ব্যক্তির যাবতীয় পরিচয় সংরক্ষিত থাকবে। এবং আপনি এই ধরনের ই পাসপোর্ট এর মাধ্যমে যে কোন দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। মূলত এই ধরনের বিশেষ জীব যুক্ত পাসপোর্ট কি বলা হয় E-passport.
ই পাসপোর্ট করতে কি কি দরকার হয়?
উপরের আলোচনা থেকে আপনি জানতে পারলেন যে ই-পাসপোর্ট কাকে বলে। তো আপনি যদি ই-পাসপোর্ট করতে চান তাহলে আপনার নিকট বেশ কিছু ডকুমেন্ট দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। তো চলুন এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক যে এই ধরনের পাসপোর্ট করার জন্য আসলে কি কি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়ে থাকে।
- ই পাসপোর্ট করার জন্য আপনাকে অবশ্যই অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং যখন আপনি ই-পাসপোর্ট এর অফিসে যাবেন তখন সেই অনলাইন কপি টি প্রদান করতে হবে।
- এই ধরনের পাসপোর্ট করার জন্য অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে। কিন্তু কোনো কারণে যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে, তাহলে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করতে পারবেন।
- আপনি বর্তমানে যে স্থানে অবস্থান করে আছেন সেই স্থানের সঠিক ঠিকানা প্রয়োজন হবে।
- যদি আপনার পূর্ববর্তী কোন পাসপোর্ট থাকে তাহলে অবশ্যই সেই পাসপোর্ট এর একটি ফটোকপির প্রয়োজন হবে।
- আপনি যদি কোন পেশার সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন যেমন, ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা হিসাবরক্ষক। তাহলে অবশ্যই আপনার পেশাগত সনদের কপি প্রদান করতে হবে।
- সবশেষে আপনার নাগরিক সনদপত্র আপনার চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হবে।
তো আপনি যদি এই পাসপোর্ট করতে চান তাহলে আপনার আসলে কি কি ডকুমেন্টস দেওয়ার প্রয়োজন হবে, সেগুলো নিয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আলোচিত এই বিষয় গুলো সম্পর্কে আপনি পরিষ্কার একটা ধারণা পেয়ে গেছেন।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৩
যদি আপনি নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে আপনার একটা বিষয়ে জানা থাকবে যে একটি পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য বেশ কিছু নিয়ম নীতি অনুসরণ করতে হয়। ঠিক তেমনি ভাবে আপনি যখন ই-পাসপোর্ট তৈরি করতে যাবেন তখনও কিন্তু আপনাকে বিভিন্ন নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করতে হবে। আর এবার আমি ই-পাসপোর্ট করার নির্দেশনা বলী গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
- ই পাসপোর্ট করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
- কিংবা আপনি যদি অনলাইনে আবেদন করতে না চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অনলাইন এপ্লাই করার পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করে নিতে হবে। এবং সেই পিডিএফ ফাইলটি আপনার জীবন বৃত্তান্ত প্রদান করতে হবে।
- আপনি চাইলে এখানে ক্লিক করে সরাসরি ওই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার অনলাইন পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
- যদিওবা E Passport করার জন্য আপনার যেসব কাগজপত্র দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে সেগুলো সত্যায়িত করার দরকার হবে না।
- এবং আপনি যেই পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য যে আবেদন ফর্মটি পূরণ করবেন। সেই আবেদন ফরমে আপনার নিজের কোন প্রকার ছবি দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
- একটি ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার সময় অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হবে। কিন্তু যদি কোনো কারণবশত আপনার এই জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার জন্ম সনদ ব্যবহার করতে পারবেন।
- কিন্তুু আপনি যদি 18 বছরের নিচে হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনি আপনার বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্র টি ব্যবহার করতে পারবেন।
- যদি আপনার পূর্বে কোন পাসপোর্ট তৈরি করা থাকে তাহলে অবশ্যই ই-পাসপোর্ট তৈরি করার সময় আপনার পূর্বে তৈরি করা ওই পাসপোর্ট এর কপি প্রদান করতে হবে।
আপনি যদি এই ধরনের ই পাসপোর্ট তৈরি করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে কি কি নিয়ম নীতি মেনে কাজ করতে হবে। উপরের আলোচনায় আমি সেই নিয়ম-নীতি গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এবং একজন ব্যক্তি হিসেবে যখন ই পাসপোর্ট তৈরি করতে চাইবেন, তখন অবশ্যই এই নিয়ম নীতি গুলো মেনে কাজ করতে হবে।
ই পাসপোর্ট তৈরি করতে কত টাকা প্রয়োজন হয়?
একটি পাসপোর্ট তৈরি করতে আসলে কত টাকা প্রয়োজন হবে সেটা মূলত নির্ভর করবে আপনি কত বছর মেয়াদী এবং কোন ধরনের ই পাসপোর্ট করতে চাচ্ছেন। সে কারণে নিচে আমি লিস্ট আকারে ই পাসপোর্ট করার জন্য মোট কত টাকা প্রয়োজন হবে তা উল্লেখ করে দিচ্ছি।
- আপনি যদি 48 পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্ট 5 বছর মেয়াদী হিসেবে করতে চান। তাহলে আপনার 3000 টাকা থেকে শুরু করে 7000 টাকা পর্যন্ত ব্যয় করার প্রয়োজন পড়বে।
- আপনি যদি 48 পৃষ্ঠার পাসপোর্ট 10 বছর মেয়াদী হিসাবে করতে চান সেক্ষেত্রে আপনার 5000 টাকা থেকে শুরু করে 9000 টাকা পর্যন্ত ব্যয় করার প্রয়োজন পড়বে।
- যদি আপনি 64 পৃষ্ঠার পাসপোর্ট 5 বছর মেয়াদী হিসেবে করতে চান। সেক্ষেত্রে আপনার 5000 টাকা থেকে শুরু করে 10 হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করার প্রয়োজন পড়বে।
- যদি আপনি 64 পৃষ্ঠার পাসপোর্ট 19 বছর মেয়াদী হিসেবে করতে চান সেক্ষেত্রে, আপনার 7000 টাকা থেকে শুরু করে 12000 টাকা পর্যন্ত ব্যয় করার প্রয়োজন পড়বে।
ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদি পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য আপনার খরচের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। আর একটি ই-পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য 15% ভ্যাট সহ যে টাকার প্রয়োজন হয় সেটা আমি উপরে উল্লেখ করে দিয়েছি।
আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক বর্তমান সময়ে ই পাসপোর্ট এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি আপনি বিদেশ ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে ই-পাসপোর্ট আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ই-পাসপোর্ট কি এবং ই পাসপোর্ট করার নিয়ম কি কি সে বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল থেকে আপনি ই-পাসপোর্ট রিলেটেড সমস্ত বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন।