যদি আপনি সনাতন ধর্মলম্বী হয়ে থাকেন। তাহলে আপনি অবশ্যই একটা বিষয় সম্পর্কে জেনে থাকবেন। আর সেটি হল যে, হিন্দু আইনে বাবার সম্পত্তি শুধুমাত্র ছেলেরা ভোগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তাদের মেয়েরা বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত থাকবে। তো এই বিষয় টি নিয়ে বৈষম্য দূর করার জন্য দেশে কয়েক বছর ধরে। বিভিন্ন রকমের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর বর্তমান প্রজন্মের তরুণ তরুণীরা এই বৈষম্য কে দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে জন্য তারা নতুন একটি সংগঠন তৈরি করেছে। এবং সেই সংগঠনের নাম দিয়েছে “হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ”। তো এই সংগঠন আসলে কতদূর অগ্রসর হতে পেরেছে। এবং এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য কি সেই বিষয় গুলো সম্পর্কে আজকে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব হিন্দু আইনে বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার বাংলাদেশ সম্পর্কে। যদি আপনি এই বিষয় টি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। তাহলে আপনাকে আজকের পুরো আলোচনা টি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
হিন্দু আইনে বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার বাংলাদেশ
হিন্দু মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সম্পত্তির ভাগ করার দিক থেকে যে বৈষম্য মূলক আচরণ করা হয়। সেটা কিন্তু একবারে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। যেমন একটি মেয়ের যখন বিয়ে হয়। তখন সেই মেয়ে টি তার বাবার সম্পত্তি থেকে একবারই বঞ্চিত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে সেই মেয়েটি যখন তার স্বামীর সংসার করে। এবং কোন কারণে যদি তার স্বামী মারা যায়। তাহলে কিন্তু সেই মেয়ে টি তার স্বামীর সম্পত্তির অংশীদার হওয়া নিয়েও বেশ ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়। কেননা যখন একটি মেয়ের বিয়ে হয়। তখন সে তার স্বামীর ঘরে যায় এবং তার সংসারে যদি কোন প্রকারের ছেলে না থাকে। তাহলে সেই বিয়ে হওয়ার নারীর মেয়ে সন্তান থাকার কারণে। সে তার স্বামীর সম্পত্তি ভাগ পাবে না। হিন্দু আইনে বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার বাংলাদেশ।
মূলত এই বিষয় টি হিন্দু আইনের মধ্যে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে। এক্ষেত্রে যদি একজন হিন্দু মেয়ের বিয়ে হওয়ার পরে তার স্বামী মৃত্যুবরণ করে। এবং সেই মেয়েটির যদি কোন ছেলে সন্তান না থাকে। তাহলে সেই মেয়ে টি দুই দিক থেকে বঞ্চিত হবে। প্রথমত সে মেয়ে হওয়ার ফলে তার নিজের বাবার সম্পত্তির ভাগী দার হতে পারবে না। এবং দ্বিতীয়ত তার বিয়ে হওয়ার স্বামীর কোন ছেলে সন্তান না থাকার কারণে। সে তার স্বামীর সম্পত্তির অংশীদার হতে পারবে না। আর এই পরিস্থিতি তে একটি হিন্দু মেয়ে কে বেশ বিড়ম্বণার মধ্যে পড়তে হয়।
সংস্কারের দাবিতে হিন্দু তরুণদের নতুন সংগঠন
মেয়েদের ক্ষেত্রে বাবার সম্পত্তি ভাগ করা নিয়ে হিন্দু আইন রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ের প্রজন্ম এই আইন কে কোন ভাবেই মানতে চাচ্ছে না। বরং তারা এই আইনের মধ্যে পরিবর্তন আনতে চায়। আর সে কারণে এই আইন পরিবর্তন করার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে তীব্র প্রতিবাদ করা হচ্ছে। আর তারা যেন এই তীব্র প্রতিবাদ বজায় রাখতে পারে। সে জন্য নতুন একটি সংগঠন তৈরি করেছে। এবং সেই নতুন সংগঠনের নাম হলো, হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ। তো এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র হিন্দু মেয়েদের সম্পত্তি ভাগ করার বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করছে না। বরং এই সংগঠনের আরো বেশ কিছু কাজ রয়েছে। যেমন, প্রতিবন্ধী কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ক্ষেত্রেও এই সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। যেন হিন্দু মেয়ে, প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য মুলক আচরণ না করা হয়।
তো তাদের তৈরি করা এই নতুন সংগঠন হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ এর যে সভাপতি রয়েছে। তার নাম হলো ড: ময়না তালুকদার। এবং তিনি স্পষ্ট ভাবে বলেছেন যে, বাংলাদেশ হিন্দু আইনের ক্ষেত্রে যে আইন বিদ্যমান রয়েছে। সেটি মূলত পুরনো প্রথার উপর নির্ভর করে আছে। আর এই প্রথার উপর নির্ভর করে বর্তমান প্রজন্ম থাকতে চায় না। বরং এই প্রথার পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে করে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের ক্ষেত্রেও সমান অধিকার প্রদান করা হয়। এবং তারা আরো বেশ কিছু কথা স্পষ্ট ভাবে বলেছেন। যেমন, একটি হিন্দু মেয়ে প্রথমত তার পিতার সম্পত্তির কোন উত্তরাধিকারী হতে পারে না। এর পাশাপাশি সেই মেয়ে টি তার স্বামীর সম্পত্তিরও কোন উত্তরাধিকারী হতে পারে না। যা আসলেই পরিষ্কার বৈষম্য মূলক আচরণ। এবং এই বৈষম্য মূলক আইনে এর পরিবর্তন অনিবার্য।
সংস্কার প্রশ্নে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিভক্তি
আমি উপরে আপনাকে একটা কথা বলেছি। আর সেই কথাটি হলো যে হিন্দুদের মধ্যে মূলত দুইটি ভাগ তৈরি হয়েছে। একদল হিন্দু চায় যে মেয়েদের ক্ষেত্রে পিতার সম্পত্তি থেকে কোন প্রকার অধিকার দেওয়া হবে না। আবার এক দল বলছে যে, ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের কে পিতার সম্পত্তির ভাগ দিতে হবে। কারণ বেশ কিছুদিন আগে সংগঠিত হওয়া একটি সম্মেলনে জাতীয় হিন্দু মহাজোট এর নেতা বিশেষ একটি বক্তব্য প্রদান করেন। মূলত এই সম্মেলনে গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন যে, হিন্দুদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করার জন্য একটি দল কুচক্র সৃষ্টি করেছে। যাতে করে হিন্দুদের মধ্যে আরও বিভেদ সৃষ্টি হয়।
এবং গোবিন্দ প্রামাণিক আরো বলেন যে, একটি হিন্দু মেয়ে কে যখন কোন একটি হিন্দু ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। তখন যৌতুক হিসেবে সেই মেয়েটির সাথে আরো অনেক টাকা এবং স্বর্ণালংকার দিয়ে থাকে। তো এত কিছু দেওয়ার পরেও কেন সেই মেয়ে কে পিতার সম্পত্তির ভাগ দিতে হবে। আর এমন মন্তব্য থেকেই বোঝা যায় যে, এই সংস্কার আইন নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে কেমন দ্বিমত রয়েছে। হিন্দু আইনে বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার বাংলাদেশ।
হিন্দু আইনে সংস্কারে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা
তো বাংলাদেশ এর মধ্যে যদি কোন আইনের পরিবর্তন আনা হয়। তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের হতক্ষেপ থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে যদি বাংলাদেশ হিন্দু আইনের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ নিয়ে কোন আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। তাহলে অবশ্যই সেটা সরকারি ভাবে করতে হবে। তো এখানে একটি সমস্যা রয়েছে সেটি হলো যে এই আইন পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের হিন্দুদের মধ্যেই রয়েছে দ্বিমত। যার ফলে সরকার কোন সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছে না। অপরদিকে বাংলাদেশে অবস্থিত যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ রয়েছে। তারা বলেছেন, এই সংস্কারের মধ্যে বিভিন্ন রকমের জট রয়েছে। আর এই জট গুলো যত খুলতে যাবেন ততই সমস্যা বাড়তে থাকবে।
আর এইসব কারণে বাংলাদেশ সরকার এখনো নিশ্চুপ রয়েছে। সে কারণেই সম্পত্তি উত্তরাধিকারী হিসেবে এখনো কোন প্রকারের সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তবে যদি হিন্দুদের মধ্যে সমঝোতা আসে। এবং তারা যদি সবাই একমত হয়ে সরকারের কাছে দাবী করে। তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ হিন্দু সম্পত্তি ভাগের আইনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। অন্যথায় এমন ঝামেলা অব্যাহত থাকবে।
বর্তমান সময়ে আপনি যদি ভালো ভাবে লক্ষ্য করে দেখেন। তাহলে আপনি হিন্দুদের মধ্যে দুইটি ভাগ দেখতে পারবেন। কেননা একদল হিন্দু যারা চাচ্ছে যে বাবার সম্পত্তি শুধুমাত্র ছেলেরা ভোগ করতে পারবে। আবার আরেক দল হিন্দু এই প্রস্তাব না করে দিয়েছে। এবং তাদের দাবি হলো বাবার সম্পত্তি ছেলেদের পাশাপাশি এখন মেয়েদেরকে ও সমান অধিকার দিতে হবে। যাতে করে এই বৈষম্য একেবারেই দূর হয়ে যায়। কেননা ইতিমধ্যে অনেক হিন্দু নেতারা বলেছেন যে, কিছু কট্টর পন্থী বিকৃত মস্তিষ্কের লোক মেয়েদের সম্পত্তি ভাগ করে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আবার আরেক দল লোক আছেন যারা মূলত বলছে যে এতদিনে যে হিন্দু আইন ছিল। সেটাতে মেয়েদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। আর তারা এখন এই আইনের পরিবর্তন চায়। যেহেতু এই সম্পত্তি ভাগ করার বিষয় টি নিয়ে হিন্দুদের মধ্যেই মত এবং দ্বিমত রয়েছে। সেহেতু সরকার এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না।