বাংলাদেশে বসবাসরত প্রতিটা বাঙ্গালীর সবচেয়ে বড় গৌরব হলো স্বাধীনতা৷ যার ফলে বাংলাদেশ নামক একটি ছোট্ট ভূখন্ড অর্জন করতে পেরেছে নিজের স্বার্বভৌমত্ব। আর সে কারনে প্রতি বছরের ন্যায় ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস, এটা তো আমরা সবাই জানি৷ কিন্তুু এই স্বাধীনতা দিবস কেন পালিত হয়, কিভাবে আমাদের বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্থানের নিকট থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সে বিষয় গুলো এখনও অনেক মানুষের কাছে অজানা রয়েছে। আজকের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় হলো স্বাধীনতা দিবস কবে? কিভাবে এবং কেন পালন করা হয়? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে।
আগামী প্রজন্মের নিকট স্বাধীনতার বীজ বপন করাটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আজকের এই স্বাধীনতা কিন্তুু এমনি এমনি আসেনি৷ বরং এর জন্য শহীদ হতে হয়ে লাখো নিরীহ মানুষকে, হাজার হাজার বাঙ্গালী মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে আজকে আমরা একটি স্বাধীন দেশকে পেয়েছি। আর স্বাধীনতা দিবসের মমার্থ নিয়েই মূলত আজকের এই লেখাটি পাবলিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের আদি থেকে অদ্যোপান্ত নিয়েই আজকে বিষদভাবে আলোচনা করা হবে। আপনি যদি আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চান৷ তাহলে পুরো লেখাটি মন দিয়ে পড়ুন।
স্বাধীনতা দিবস কি?
যখন কোনো একটি দেশ তার জনগনের কল্যান সাধনের নিমিত্তে নিজস্ব গনতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার অধিকার পাবে৷ তখন সেই দেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে৷ আর তারপরে নিজের দেশের কল্যানে নিজস্ব নিয়ম নীতিতে নিজের দেশকে পরিচালনা করতে পারবে।
স্বাধীনতা দিবস কবে
১৯৭১ সালে লাখ লাখ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের ছোট্ট দেশটি ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতাকে অর্জন করতে সক্ষম হয়। আর সেই সময় থেকে আজ অবধি নিজের গনতন্ত্রের নিয়ম অনুসারে বাংলাদেশ কে পরিচালিত করে আসছে৷ আর সে কারনে প্রতি বছরের ২৬ শে মার্চে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়ে আসছে।
স্বাধীনতা দিবস কেন পালিত হয়?
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চে যখন নিরীহ বাঙ্গালি গভীর ঘুমে আছন্ন ছিলো। সেই কালো রাতে পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্থান) থেকে আসা নরপিশাচরা বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় ঘুমন্ত বাঙ্গালীর উপর।
সেই রাতে পশ্চিম পাকিস্তানের নরপিশাচদের বর্বরতার সীমা এতোটাই মর্মান্তিক ছিলো যে, ঐ রাতে বাঙ্গালীর কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝড়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষের তাজা প্রাণ।
আর অন্যদিকে সেই বর্বরতার সময় নিরস্ত্র বাঙ্গালীর তেমন কিছুই করার ছিলোনা। তবে এতোকিছুর পরেও পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বরতার কাছে বাঙ্গালী জাতিরা হার মেনে নেয়নি। নিজের স্বজন হারানোর বেদনাকে বুকে চেপে দীর্ঘ ৯ টি মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা।
পৃথিবীর মানচিত্রে নিজের দেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিত করতে পেরেছে। আর এই যুদ্ধে শহীদ হওয়া প্রতিটা মানুষের স্বরণে প্রতি বছরের ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন হয়ে আসছে।
কিভাবে স্বাধীনতার সূচনালগ্ন হয়েছিলো?
আজকে আমরা নিজের দেশকে যতো সহজভাবে স্বাধীন দেশ বলছি, আদতে এই স্বাধীনতাকে অর্জন করাটা এতোটা সহজ ছিলোনা। বরং এর পেছনে রয়েটে বিরাট এক ইতিহাস।
আর আমাদের দেশে বসবাসরত প্রতিটা মানুষের সেই ইতিহাস সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা থাকা উচিত। যেন, এই অর্জনকে আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি। তো চলুন এবার সেই ইতিহাস কে একটু স্বরণ করা যাক।
সময়টা ছিলো ১৯৪৭ সাল, সেই সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশ ব্রিটিশদের হাত থেকে নিজেদের স্বাধীন করতে সক্ষম হয়। আর তারপরে গোটা ভারত পুনরায় পৃথক দুটি রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে যায়।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট মানুষদের নিয়ে যে রাষ্ট্রের সূচনা হয়, তার নাম হলো পাকিস্থান। এবং হিন্দু সহো অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে গঠিত হয় ভারত নামের একটি রাষ্ট্রের।
তবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট মানুষদের নিয়ে গঠিত পাকিস্থান রাষ্ট্রের আবার দুটি ভূখন্ড ছিলো। যার একটি থেকে অন্যটির দুরত্বের ব্যবধান ছিলো প্রায় হাজার মাইলের সমান। আর এই দুটো ভূখন্ডের মধ্যে শুধুমাত্র ধর্মের দিক থেকেই মিল ছিলো।
এবং অন্যান্য সবক্ষেএেই ছিলো ব্যাপক বৈষম্য। আর সেই কারনে পূর্ব পাকিস্তান সর্বদার জন্য অনেক দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় বিভিন্ন দিক থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।
কিন্তুু স্বাধীনতা যে উক্ত দেশের প্রতিটা মানুষের মৌলিক অধিকারের ন্যায়, তা পশ্চিম পাকিস্থান কোনে ভাবেই মেনে নিতে চাইতো না। অপরদিকে যখন এই অধিকার কে বঞ্চিত করে পূর্ব পাকিস্তানের উপর চলতো অমানবিক শোষন।
আর এই শোষন ও নিপীড়ন থেকে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ যখন সোচ্চার হয়েছিলো। ঠিক তখনি ২৫ শে মার্চ গভীর রাতে “অপারেশন সার্চ লাইট”- নামে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর বর্বর হামলা চালায়।
আর সেই কারনে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ চট্রগ্রামে অবস্থানরত কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষনাপএ পাঠ করে এদেশকে স্বাধীন করার সংগ্রামে ঘোষনা দেন৷ আর তারপর থেকে এই দেশকে স্বাধীন করার জন্য দীর্ঘ ৯ টি মাস যুদ্ধ করতে হয়েছে। আর এই যুদ্ধের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ।
পাকিস্থানের সাথে কিসের বিরোধ ছিলো?
আমাদের বাঙ্গালী জাতীর যে কতটা সহ্য ক্ষমতা আছে, তা আপনি তখনি বুঝতে পারবেন, যখন আপনি পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় পূর্ব পাকিস্থানের বৈষম্য গুলো জানতে পারবেন। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভাষার বৈষম্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দিক থেকেও বিরাট বৈষম্য রয়েছে। এবার আমি সেগুলোকে স্বল্প পরিসরে তুলে ধরার চেস্টা করবো।
০১| রাজনৈতিক বৈষম্য
আয়তনের দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্থানের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তান অনেকটা বড় হলেও রাজনৈতিক দিক থেকে বেশিরভাগ ক্ষমতা ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে। যার কারনে রাজনৈতিক দিক থেকে আমাদের বাংলাদেশ তখন কোনো প্রকার সুযোগ সুবিধা পেতোনা। উল্টো সেই সময়ে যখন আমাদের দেশের কোনো নেতা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতেন। তখন তারা নানা রকম টালবাহানা করে নির্বাচিত এই প্রার্থীদের আসন গ্রহন করতে অসম্মতি জানাতেন।
০২| ভাষার বৈষম্য
আপনি যদি বর্তমান বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের বৈষম্যের কথা জানতে চান। তাহলে বলতে হবে, এই বৈষম্য দেখা যায় ১৯৪৭ সাল থেকেই। কেননা, সেই সময়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্থান নতুন একটি নিয়ম চালু করেছিলো। সেটি হলো, “উর্দু ভাষা হবে পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা”। কিন্তুু বাঙ্গালীরা নিজের মাতৃভাষায় কথা বলা থেকে কোনো ভাবে বঞ্চিত হতে চায়নি। আর সেই কারনে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সালাম,বরকত, রফিক, জব্বার সহো অনেকে জীবন দিয়েছিলো। এর ফলে ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
০৩| অর্থনৈতিক বৈষম্য
তৎকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ট হওয়ার পরেও পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিরাট বৈষম্য ছিলো। কেননা, উক্ত সময়ে রাষ্ট্রীয় আয়ের বেশিরভাগ অংশটাই ব্যয় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়েনর জন্য। অপরদিকে একই দেশ হওয়ার সত্বেও পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ছিলো নানা রকম সীমাবদ্ধতা।
কিভাবে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়?
আমাদের বাংলাদেশ কে স্বাধীন করতে যে তাজা প্রান গুলো শহীদ হয়েছে। তাদের স্বরণ করাটা আমার সবার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কেননা, সেই সময়ে যদি ঐ মানুষ গুলো নিজের জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধ না করতো। তাহলে হয়তবা আজ পর্যন্ত আমাদের কে পরাধীনতার গ্লানি বহন করতে হতো। হয়তবা এখনও আমাদের নানা বৈষম্যের শিকার হওয়ার লাগতো।
আর নিজের দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে যারা জীবন দিয়েছে। তাদের স্বরণে এখন প্রতি বছরের ২৬ শে মার্চ স্মৃতিসৌধে পুষ্প অর্পন করা হয়। আর এই দিনে বাংলার সকল শ্রেনীর মানুষ অংশগ্রহন করে। ছাএ,শিক্ষক, কৃষক সহো সব পেশার মানুষ পুষ্পাঅঞ্জলী প্রদানের মাধ্যমে স্বরণ করে সেই শহীদদের। কেননা, তারা আজও বেঁচে আছে প্রতিটা বাঙ্গালির হৃদয়ে।
স্বাধীনতা দিবস ও আজকের প্রজন্ম
১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আমরা অর্জন করেছি আজকের এই স্বাধীন দেশ। আর এই স্বাধীনতা কে অর্জন করতে গিয়ে অনেকেই তার প্রিয় স্বজনকে হারিয়েছেন। অনেক মা-বোনের ধর্ষনের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা কে অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তুু বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই অর্জন আজ শুধুমাত্র একটি গল্প হয়ে বেঁচে আছে।
আর এই কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতা যেন গল্পের মাঝে বেঁচে না থাকে। সেজন্য আমাদের উচিত নতুন প্রজন্মকে এই মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া। যাতে করে তাদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা বিরাজমান থাকে এবং দেশকে ভালোবেসে নিজেকে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে প্রকাশ করতে পারে।