আপনি যদি গুগলে অনুসন্ধান করেন ফেনী জেলার নামকরণের ইতিহাস, ফেনী কিসের জন্য বিখ্যাত, ফেনী জেলা কেন বিখ্যাত, ফেনী জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি, ফেনী জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ নিয়ে তবে সঠিক জায়গায় এসেছেন। ফেনী সহ আরও অন্যান্য সকল জেলা পরিচিতি আপনি আমাদের সাইটের মাধ্যমে সহজেই পেতে পারবেন।
ফেনী জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
❝মিষ্টি❞ শব্দটা শুনলেই জিভে জল আসে। এমনকি আদিকাল থেকেই বাঙালির যেকোন অনুষ্ঠান পালা- পার্বণে মিষ্টি না হলে চলে না। মিষ্টি নিয়ে বাঙালি জাতি যতটা আহ্লাদ করে বোধকরি আর কোন জাতিই হয়ত করেনা। আজ এমন একটি মিষ্টির কথা বলব যা ফেনী জেলার নাম উজ্জ্বল করে রেখেছে গত ৫০ বছর ধরে।বিখ্যাত খাবার থাকলেও একটি মিষ্টি সবার মুখে মুখে পরিচিত যার নাম ❝খন্ডলের মিষ্টি❞। প্রায় গত ৫০ বছর ঐতিহ্য ধরে রেখে তৈরি হচ্ছে পরশুরাম উপজেলার এই “খন্ডলের মিষ্টি”। যা এখনও খুবই জনপ্রিয় ও বিখ্যাত।আরও একটি জনপ্রিয় খাবার হলো ফেনীর মহিষের দুধের ঘি।যা অত্যধিক প্রসিদ্ধ।
আশাকরি উপরোক্ত তথ্য ভিত্তিতে আপনি ফেনী জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে ধারণা পেতে সক্ষম হয়েছেন। চলুন তবে ফেনী জেলা সম্পর্কে আরও সকল তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ফেনী জেলা
ফেনী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি জেলা। এটি বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং ত্রিপুরার একটি অংশ ছিল। ২০১১ সালের হিসাবে, জেলার আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ১,৪৩৭,৩৭১ যা এটিকে চট্টগ্রাম বিভাগের নবম-জনবহুল জেলায় পরিণত করেছে।এর আয়তন মোট ৯২৮.৩৪ বর্গকিমি (৩৫৮.৪৩ বর্গমাইল)।সাক্ষরতার হার মোট ৬৯%।এটি বাংলাদেশের ৬৪ তম জেলা।
ফেনী জেলার নামকরণের ইতিহাস
ফেনী জেলার নাম নিয়ে প্রচুর জনশ্রুতি রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন মতবাদ।ফেনী নদীর নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয়েছে ফেনী। মধ্যযুগে কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় একটি বিশেষ নদীর স্রোতধারা ও ফেরী পারাপারের ঘাট হিসেবে ফনী শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ষোড়শ শতাব্দীর সময়ে কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর পরাগলপুরের বর্ণনায় উল্লেখ করেন,
“ফেনী নদীতে বেষ্টিত চারিধার,
পূর্বে মহাগিরি পার নাই তার”
এরপর সতের শতকে মির্জা নাথানের ফার্সী ভাষায় রচিত বাহরিস্তান-ই-গায়েবীতে ফনী শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে ফেনী-তে পরিণত হয়।আঠারো শতকের শেষার্ধে কবি আলী রজা তার পীরের বসতি হাজীগাঁও এর অবস্থান সম্পর্কে লিখছেন,
“ফেনীর দক্ষিণে এক ষর উপাম,
হাজীগাঁও করিছিল সেই দেশের নাম”
এভাবে তারা নদী অর্থে ফেনী ব্যবহার করেছেন। ধারণা করা হয় আদি শব্দ ফনী মুসলমান কবি ও সাহিত্যিকদের ভাষায় ফেনীতে পরিণত হয়েছে।
অতীতে এ অঞ্চল ছিল সাগরের অংশ, তবে উত্তর পূর্ব দিক ছিল পাহাড়িয়া অঞ্চল। ফেনীর পূর্ব দিকের রঘুনন্দন পাহাড় থেকে কাজিরবাগের পোড়ামাটি অঞ্চলে হয়ত আদিকালে শিকারী মানুষের প্রথম পায়ের চিহ্ন পড়েছিল। এখানকার ছাগলনাইয়া গ্রামে ১৯৬৩ সালে একটা পুকুর খনন করার সময় নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের ব্যবহৃত একটি হাতিয়ার পাওয়া গেছে। পণ্ডিতদের মতে এটি অন্তত দশ হাজার বছরের পুরনো।
যেহেতু ফেনী জেলা সাগর এলাকা ছিলো তাই কচুরিপানা যুক্ত জলাভূমি বেশি ছিলো। কারো কারো মতে এই জেলার নামকরণ হয়েছে সে কচুরিপানার জন্য সৃষ্টি হওয়া ফেনার থেকে। আরেকটি প্রচলিত জনশ্রুতি রয়েছে তা হলো ফেনীর অদূরে একটি পোড়ামাটির পাহাড় ছিলো যার নাম শিলার শহর নামে পরিচিত ছিলো। আর এটি ছিলো ফনী নামক সামন্ত রাজার রাজধানী। তাই নাকি তার নামানুসারে ফেনী জেলার নাম রাখা হয়েছিল৷ আরো একটি মতবাদ রয়েছে, বহু বছর আগে চীনা পর্যটক এসেছিলেন সফরে, তখন তিনি ফেনীতে অবস্থান করেছিলেন আর তার নাম ছিলো ফা-হিয়েন। তার নাম অনুযায়ী ফেনী নাম রাখা হয়।
মজার একটি মতবাদ রয়েছে তা হলো জেলার আয়তন অনুযায়ী এখানে খাল বিল নদী বেশি হওয়াতে এতে সাপ এর উৎপাত ছিলো অনেক বেশি। এ থেকে বাঁচতে কাঁটাযুক্ত গাছ ফণীমনসার চাষ করা হতো এ অঞ্চলে, সেই থেকে ফেনী নামের উৎপত্তি হয়েছে এমনটা শোনা যায়। আরো অনেকের মতে ফেনীর আদিনাম ছিলো শমসেরনগর।
ফেনী নদীর তীরে রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বীর বাঙ্গালী শমসের গাজীর রাজধানী ছিল। তিনি এখান থেকে যুদ্ধাভিযানে গিয়ে রৌশনাবাদ ও ত্রিপুরা রাজ্য জয় করেন। তিনিই চম্পক নগরের একাংশের নামকরণ করেছিলেন জগন্নাথ সোনাপুর।১৫২৫ সালে পাঠান সুলতান নুসরত শাহ চট্টগ্রাম জয় করার পর সেনাপতি ছুটি খাঁ-কে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
কবিনর শ্রীকরনন্দী মহাভারতের অনুবাদ প্রচার করেছিলেন এবং তাতে সেনাপতির আবাসস্থল নিয়ে বর্ণনায় ফেনী নদীর নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি মতবাদ এসেছে নদী নিয়ে তাই ধারণা করা হয় ফেনী জেলার নাম ফেনী নদীর নামানুসারেই হয়েছে।
ফেনী জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
➤ ফেনী নদী
➤ ফেনী বিমানবন্দর
➤ মুহুরী প্রজেক্ট
➤ শমসের গাজীর কেল্লা
➤ বিজয় সিংহ দীঘি
➤ রাজাঝির দীঘি
➤ চাঁদগাজী ভূঁইয়া মসজিদ
➤ শর্শাদী শাহী মসজিদ
➤ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মসজিদ
➤ প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি
➤ বাঁশপাড়া জমিদার বাড়ি
➤ কালীদহ বরদা বাবু জমিদার বাড়ি
➤ সেনেরখিল জমিদার বাড়ি
➤ শিলুয়া মন্দির
➤ সাত মঠ
➤ ভারত-বাংলাদেশ প্রীতি
➤ রাধানগর-কৃষ্ণনগর সীমান্ত হাট
➤ কৈয়ারা দীঘি
➤ জগন্নাথ কালী মন্দির
➤ ভাষা শহীদ সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।
ফেনী জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি
➤ খালেদা জিয়া – রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশের সাবেক এবং প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
➤ শমসের গাজী – জমিদার, ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী।
➤ আবদুস সালাম – ভাষা শহীদ।
➤ জহির রায়হান – ভাষা সৈনিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার।
➤ আওরঙ্গজেব চৌধুরী – বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রাক্তন প্রধান।
➤ আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাক্তন উপাচার্য।
➤ আবদুল আউয়াল মিন্টু – এফবিসিসিআই সাবেক প্রেসিডেন্ট, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।।
➤ আবদুস সালাম – বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম মহাপরিচালক।
➤ আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী – বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাক্তন উপাচার্য।
➤ আমিন আহমদ – প্রাক্তন বিচারপতি।
এ এফ রহমান – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
➤ আমীন আহম্মেদ চৌধুরী – বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
➤ আহমেদ ফজলুর রহমান – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙালি উপাচার্য।
➤ ইকবাল সোবহান চৌধুরী – সাংবাদিক নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা।
➤ ইনামুল হক – অভিনেতা, লেখক এবং নাট্যকার।
➤ এ বি এম মূসা – সাংবাদিক এবং বাংলাদেশী প্রাক্তন সংসদ সদস্য।
➤ ওয়াসফিয়া নাজরীন – পর্বতারোহী, এভারেস্ট বিজয়ী দ্বিতীয় বাঙালি নারী।
➤ কাইয়ুম চৌধুরী – চিত্রশিল্পী।
➤ কাজী এবাদুল হক – ভাষা সৈনিক এবং প্রাক্তন বিচারপতি।
➤ খান বাহাদুর আবদুল আজিজ – শিক্ষাবিদ, লেখক এবং সমাজকর্মী।
➤ গাজীউল হক – সাহিত্যিক, গীতিকার এবং ভাষাসৈনিক।
➤ গিয়াস উদ্দিন সেলিম – নাট্যকার, নাট্যনির্মাতা এবং চলচ্চিত্রকার।
➤ গিয়াস কামাল চৌধুরী – সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং সংবাদ বিশ্লেষক।
➤ জহুর হোসেন চৌধুরী – সাংবাদিক।
➤ খাজা আহমেদ – মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,বাংলাদেশী প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
➤ মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন – ব্যবসায়ী,শিল্পপতি,প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।।
➤ মাহবুবুল আলম তারা – প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
➤ জয়নাল হাজারী – বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশী প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
➤ জয়নাল আবেদিন – বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশী প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
➤ জাফর ইমাম – বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশী প্রাক্তন মন্ত্রী,প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
সাঈদ এস্কান্দার – প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
➤ রেহানা আক্তার রানু প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
➤ শিরীন আখতার – সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
➤ নজির আহমেদ – ছাত্রনেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তিনি প্রথম শিকার।
➤ ফয়জুল মহিউদ্দিন – শহীদ বুদ্ধিজীবী।
➤ শহীদুল্লা কায়সার – লেখক এবং বুদ্ধিজীবী।
➤ বেলাল চৌধুরী – সাংবাদিক এবং প্রাবন্ধিক।
➤ মিজানুর রহমান সাঈদ – ইসলামি পণ্ডিত ও মুফতি
➤ মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন – ক্রিকেটার।
➤ আবদুস সালাম (বীর বিক্রম) -বীর মুক্তিযোদ্ধা।
➤ রবিউল হক – বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
➤ রোকেয়া প্রাচী – অভিনেত্রী এবং নাট্যকার।
➤ শমী কায়সার – অভিনেত্রী এবং প্রযোজক।
➤ শরিফা খাতুন – শিক্ষাবিদ এবং ভাষা সৈনিক।
➤ শামসুন নাহার মাহমুদ – নারী মুক্তি আন্দোলনের নেত্রী।
➤ শাহরিয়ার কবির – লেখক এবং সাংবাদিক।
➤ সালাহউদ্দিন মমতাজ – বীর মুক্তিযোদ্ধা।
➤ সিরাজুল হক খান – শহীদ বুদ্ধিজীবী।
➤ সুমাইয়া কাজী – নারী উদ্যোক্তা।
➤ সুলতান মাহমুদ – বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
➤ আনিসুর রহমান আনিস – চলচ্চিত্র অভিনেতা।
➤ সেলিনা পারভীন – শহীদ বুদ্ধিজীবী।
➤ সেলিম আল দীন – নাট্যকার এবং গবেষক।
➤ হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী – রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ফুটবলার।