আসলামুআলাইকুম প্রিয় পাঠক। আশা করি, আল্লাহ তায়ালা রহমতে আপনি অনেক ভাল আছেন। আবারও আপনাদের সাথে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আপনি কি জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ৪১ জন সাহাবীদের নাম খুঁজতেছেন? পৃথিবীতে সব থেকে ভাগ্যবান তারাই যারা দুনিয়ার মাঝখান থেকে জান্নাতের টিকিট পেয়েছে। ইসলামে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ১০ জন। জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত এই সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। কিছু উৎস অনুযায়ী এই সংখ্যা ৪১ আবার কিছু উৎস বলছে ১০ জন।
আমরাও কখনো কখনো ভাবি তাদের মত যদি আমাদের এমন কোন সৌভাগ্য থাকতো, তাহলে অনেক ভালো হতো। আমাদের নিশ্চয়ই সৌভাগ্য রয়েছে কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা কাজ করি না। আশা করি আজকের আর্টিকেল পড়ে সে সকল সাহাবীগণের জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবো। চলুন জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন সাহাবীদের নাম ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিচে নিম্নরূপ।
জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন সাহাবীদের নাম
প্রায় ১৪০০ বছর আগে হজরত মুহাম্মদ (স) পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রায় ১৪০০ আগের যুগকে সাধারণত অন্ধকারের যুগের সাথে তুলনা করা হয়। সেই সময় মানুষেরা বিভিন্ন অন্যায় অত্যাচার ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত ছিল। তখন মহান আল্লাহ তায়ালা মক্কা নগরীতে হজরত মুহাম্মদ (স) পাঠায় অন্ধকার দূর করার জন্য।
তারপরও রাসূল সাঃ এর উপর হযরত জিবরাঈল (আ) ওহী নিয়ে হাজির হয়। তখন থেকেই রাসুল পাক সাঃ ইসলাম দিন প্রচার করতে শুরু করে। কিন্তু এর মাঝে অনেক মক্কা নগরীর বাসিন্দারা রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামের হাতে হাত রেখে কালেমা ও শাহাদাত বাক্য পাঠ করে মুসলমান হয়ে যায়। এছাড়াও এমন অনেক সাহসী সাহাবীরা রয়েছে যারা ইসলামের জন্য নিজের জানমাল দিয়ে যুদ্ধ করেছে।
এই কারণে মহান আল্লাহ তা’আলা তাদের দুনিয়ার বুকে রেখেই জান্নাতের সুখবর পাঠিয়েছে। এমন সাহাবীগণের সংখ্যা মাত্র ১০ জন। চলুন সেই দশজন জান্নাতের সুখবর প্রাপ্ত সাহাবীগণের নাম জেনে নেই-
- আবু বকর
- উমর ইবনুল খাত্তাব
- উসমান ইবনে আফফান
- আলি ইবনে আবু তালিব
- তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ
- জুবাইর ইবনুল আওয়াম
- আবদুর রহমান ইবনে আউফ
- সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস
- সাঈদ ইবনে যায়িদ
- আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ
এই ১০জন সাহাবীদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
হজরত মুহাম্মদ (স) এর সব থেকে কাছের কিছু সাহাবীগণকে মহান আল্লাহতালা দুনিয়ার বুকে থেকেই জান্নাতের সুখবর পাঠিয়েছেন। যা পৃথিবীতে অন্যান্য মানুষের সৌভাগ্যের জোটে না। তবে তারা কি শুধু এমনিতেই দুনিয়ার বুকে থেকে জান্নাতের টিকিট পেয়েছে। কখনোই না, তাদের ইসলাম ধর্মের প্রতি ভালোবাসা ও মহান আল্লাহতালার আনুগত্যের কারণে দুনিয়ার বুকে থেকেও জান্নাতের টিকিট পেয়েছে।
এছাড়াও মুহাম্মদ (স.) তার সাহাবীদের সম্পর্কে বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবিদের গালি দেবে না। কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও ব্যয় করো তবুও তাদের যেকোনো একজনের অর্ধেক পরিমাণ যবের সমতুল্য হবে না।
তাহলে ভাবুন মুহাম্মদ(স) তার সাহাবীগণকে কত ভালবাসতেন। তাই আমরা কখনো সাহাবীগণকে নিয়ে কোন খারাপ মন্তব্য করবে না। তাহলে পরকালে আমাদের অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। আজকে আমরা সেই সকল সাহসী ও জান্নাতের সুখবর প্রাপ্ত ১০ জন সাহাবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী আলোচনা করব।
আবু বকর সিদ্দিক
হযরত আবু বকর সিদ্দিক ইসলামের প্রথম খলিফা। তিনি মুহাম্মদ(স) প্রধান সাহাবী, ইসলামের প্রথম খলিফা ও প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম একজন ব্যক্তিত্ব। আবার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণের সম্মান তাকে দেওয়া হয়। এছাড়াও তিনি রাসুল মুহাম্মাদের শ্বশুর ছিলেন। আবার তিনি দুনিয়ার বুকে সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি জান্নাতের টিকিট পেয়েছেন।
তিনি মক্কা নগরীতে ২৭ অক্টোবর ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ ও ২২ আগস্ট ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। মুহাম্মদ(স) মৃত্যুর পর তিনি খলিফা হন এবং মুসলিমদের নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বকালীন সময়ে বিশ্বস্ততার কারণে সংগ্রহ মুসলিম জাতি তাকে সিদ্দিক উপাধিতে ভূষিত করে। সিদ্দিক শব্দের অর্থ অত্যন্ত বিশ্বাসী।
উমর ইবনুল খাত্তাব
মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন উমর ইবনুল খাত্তাব। আবু বক্কর সিদ্দিক (রা) মৃত্যুবরণ করার পর তিনি ইসলামের তৃতীয় খলিফার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি মুহাম্মদ(স) শ্বশুর ছিলেন। তিনি ৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ ও ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন।
উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) খলিফা জীবনে রয়েছে বিভিন্ন রকমের স্মৃতি। যা আমাদের সকল মুসলিম শাসকদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ছিলেন সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। এজন্য তাকে আল ফারুক উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সাহাবীদের মর্যাদার ক্ষেত্রে মুসলমানদের কাছে আবু বকর (রা) পর উমরের অবস্থান।
উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) শাসনামলে খিলাফতের সীমানা অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এসময় সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুই তৃতীয়াংশ মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে আসে। যা মুসলিম শাসকদের মধ্যে দারুন একটি সুখবর ছিল।
উসমান ইবনে আফফান
উসমান ইবনে আফফান ছিলেন মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলিফা। তার জন্ম ৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে ও মৃত্যু ১৭ জুন ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে। তাকে সাধারণত হযরত উসমান(রা) হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি কুরাইশ গোত্রের বিশিষ্ট বংশ বনু উমাইয়ায় জন্মগ্রহণকারী। প্রথম দিকের ইসলামিক ইতিহাসে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালনকারী এবং তিনি কুরআনের আদর্শ সংস্করণ সংকলনের আদেশ দেওয়ার জন্য পরিচিত লাভ করেন।
আলী ইবনে আবু তালিব
আলী ইবনে আবু তালিব ইসলামের চতুর্থ ও শেষ খলিফা। হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যু বরণ করার পর তিনি খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন একাধারে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর চাচাতো ভাই, জামাতা ও সাহাবি যিনি ৬৫৬ – ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খলিফা হিসেবে মুসলিম বিশ্ব শাসন করেন।
এছাড়াও তিনি ছিলেন আবু তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও ফাতিমা বিনতে আসাদের পুত্র। ফাতিমা (রা) স্বামী, হাসান ও হোসাইনের পিতা। তিনি আহল আল-কিসা ও আহল আল-বাইতের একজন সফল সদস্য ছিলেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন।
তালহা ইবনে উবাউদুল্লাহ
জান্নাতের সুখবর প্রাপ্ত পঞ্চম সাহাবী ছিলেন তালহা ইবনে উবাউদুল্লাহ। তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন ঘনিষ্ঠ ও অত্যন্ত কাছের সাহাবি ছিলেন। ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম আটজন ব্যক্তির অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন তালহা ইবনে উবাউদুল্লাহ।
তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। উহুদের যুদ্ধ ও উটের যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তিনি অধিক পরিচিত অর্জন করেন। এছাড়াও বদরের যুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তালহা আবু বকর(রা) আহবানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
জুবাইর ইবনুল আওয়াম
রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও কাছের আরেকজন সাহাবা ছিলেন জুবাইর ইবনুল আওয়াম। তিনি ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। জুবাইর ইবনুল আওয়ামের মূল নাম জুবাইর এবং ডাক নাম আবু আবদিল্লাহ। তার উপাধি ছিল হাওয়ারিয়্যু রাসূলিল্লাহ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে যুবাইর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
যুবাইর সাহসী ও শক্তিমান একজন যোদ্ধা ছিলেন। কাফেরদের আক্রমণের মুখে যুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রতিটি যুদ্ধে তিনি অধিক সাহসিকতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আহনাফ বিন কায়েসের আদেশে আমর ইবন জারমুয তাকে অনুসরণ করেন এবং পথিমধ্যে যোহরের নামাজে সিজদারত অবস্থায় যুবাইরকে শহীদ করে।
আবদুর রহমান ইবনে আওফ
আবদুর রহমান ইবনে আউফ ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ৮ জন ব্যক্তির অন্যতম একজন। প্রথমে তার নাম ছিল আব্দুল আমর বা আমরের দাস। ইসলাম গ্রহণের পর মুহাম্মদ (স) তার নাম পাল্টে দেন। তিনি একজন মুসলিম সাহাবীগণের মধ্যে অত্যন্ত সাহসী ও জ্ঞানী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা) ছিলেন মহানবী মুহাম্মদ (সা) এর অন্যতম প্রধান ও বিশ্বস্ত সাহাবী। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করে। তিনি ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে ১৭ তম ব্যক্তির অত্যতম একজন। তিনি ৬৩৬ সালে পারস্য বিজয়ের নেতৃত্ব ও শাসনের জন্য অধিক পরিচিত। অনেকে মনে করেন,চীনে যাওয়ার সময় নৌ রুটে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে থেমেছিলেন। বাংলাকে ইসলামের সাথে পরিচয় করার ক্ষেত্রেও তার অবদান রয়েছে।
সাইদ ইবনে জায়িদ
জান্নাতের সুখবর প্রাপ্ত সাহাবীগণের মধ্যে সাইদ ইবনে জায়িদ নবম তম।তার জন্ম ৫৯৩-৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ও মৃত্যু ৬৭৩ খ্রিষ্টাব্দে। খলিফা উমর (রা) ভগ্নিপতি অর্থাৎ উমর(রা) এর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাবের স্বামী। তিনি রাসুল পাক সাঃ এর অত্যন্ত কাছের একজন সাহাবী ছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ
রাসুল পাক সাঃ এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ ও কাছের একজন সাহাবী ছিলেন আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ। যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা ছিলেন, তখন আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম প্রচারের শুরুতে নিজের কাছের সঙ্গীদের প্রথম ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান। তারপর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামের একজন বিশ্বস্ত সাহাবী হয়ে ওঠেন।
ধন্যবাদ আপনার অনুসন্ধান এবং আমাদের সাইটে ভিজিট করার জন্য। আপনি সম্ভব জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ৪১ জন সাহাবীদের নাম জানতে অনুসন্ধান করেছিলেন কিন্তু বিশ্বস্থ সোর্স থেকে এই সংখ্যা ১০জন হিসেবে পেয়েছি এবং এই দশ সাহাবীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করেছি।
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলে কোনো ভূল ভ্রান্তি আছে বলে মনে হলে অথবা আপনার যে কোনো মন্তব্য যদি থাকে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আপনার মন্তব্য আমাদেরকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে সহযোগীতা করবে। আপনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এখানেই শেষ করলাম।