বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম

স্বাগতম ইসুজন এর আরও একটি নতুন পোষ্টে। আপনি যদি অনুসন্ধান করে থাকেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম সম্পর্কে জানার জন্য তবে জেনে রাখুন আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। পাশাপাশি থাকছে আরও সব নতুন তথ্য একই পোষ্টে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় দিবসগুলোর একটি। এ বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশবাসীকে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর শত্রুর কবল থেকে দেশকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে আমরা বিজয় অর্জন করি। আমরা পাই হাজার হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, স্বাধীন মানচিত্র এবং স্বাধীন পতাকা। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় পালিত হয় বিজয় দিবস। এদিন লাল-সবুজে ঢেকে যায় গোটা দেশ। বাড়ির ছাদে, দোকানে, রাস্তার ধারে, গাড়ির সামনে, এমনকি রিকশার সামনের ডান হাতলে ওড়ায় লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা।

যে কোনো জাতীয় দিবসে পতাকা উত্তোলন করা যায় বলে সেটা আশা করি সবাই জানেন। কিন্তু কোন কোন দিবসে, কিভাবে পতাকা উত্তোলন করতে হয়, এসব নিয়ম-কানুন অনেকেই জানি না। আবার যারা পতাকা বানায়; তারাও ঠিকঠাক জানেন না পতাকার আকার ও রঙ সম্পর্কে আইনে কী বলা আছে? কিছু ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার অবমাননা হচ্ছে তা অনেকেই জানেন না। তাই জাতীয় পতাকা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

উত্তোলন করবেন কখন

বাংলাদেশ পতাকা বিধি, 1972 এর ধারা 4 মতে কোন দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যেতে পারে তার বিশদ প্রদান করে। যেমন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যেতে পারে আমাদের মহান নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিনে (ঈদে মিলাদুন্নবী), ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে।

এ ছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতীয় শোক দিবস এবং সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য কোনো দিবসে পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। অর্ধনমিত পতাকা উত্তোলনের নিয়ম হল অর্ধনমিত পতাকা উত্তোলনের সময় পতাকাটি সম্পূর্ণভাবে উত্তোলন করে অর্ধনমিত অবস্থায় আনতে হবে। একইভাবে পতাকা নামানোর সময় পতাকাটি ওপরে উত্তোলন করে তারপর নামাতে হবে।

See also  ফাতেমা ইভার প্রিয় বিড়াল মিনি

কোথায় প্রদর্শন করা যায়

জাতীয় পতাকা সর্বত্র প্রদর্শন করা যাবে না। জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের নিয়ম আছে। কেউ চাইলেই গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারবে না। কেননা আইনে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থায়ই গাড়ি কিংবা কোনো যান, রেল কিংবা নৌকার খোলে, উপরিভাগে বা পেছনে পতাকা ওড়ানো যাবে না।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন এবং অফিস, যেমন রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি, জাতীয় সংসদ ভবন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময় এবং কিছু নির্দিষ্ট ভবনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এসব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত পর্যন্ত পতাকা উত্তোলন করতে হবে। এটাই নিয়ম।

তবে বিশেষ কারণে রাতে ভবনসমূহে পতাকা উত্তোলিত রাখা যেতে পারে। যেমন- সংসদের রাতের অধিবেশন, রাষ্ট্রপতি বা মন্ত্রীগণের শপথ অনুষ্ঠান চলাকালীন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে, নৌযানে ও বিমানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে।

এ ছাড়া স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী সমমর্যাদার ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের অফিস ও কনস্যুলার পোস্টসমূহে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হয়।

বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের প্রধানের গাড়িতে ও তাদের নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, উপমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজধানীর বাইরে ভ্রমণকালে গাড়িতে ও নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম

মনে রাখবেন, বাংলাদেশের পতাকায় অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা ওড়ানো যাবে না। অন্য দেশের পতাকার সাথে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হলে প্রথমে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে। শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামাতে হবে। মিছিলের মাঝখানে বা মিছিলের পথের ডানদিকে পতাকা উত্তোলন করতে হবে। জাতীয় পতাকার উপর কোন কিছু লেখা বা ছাপানো যাবে না বা কোন অনুষ্ঠান বা উপলক্ষ্যে কোন চিহ্ন আঁকা যাবে না। এমনকি জাতীয় পতাকাও পোশাক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না এবং পরাও যাবে না। পতাকা উত্তোলন ও নামানোর সময় কুচকাওয়াজ ও পরিদর্শনকালে উপস্থিত সকলকে পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সঙ্গীত অবশ্যই গাওয়া বা একসঙ্গে বাজানো হবে। পতাকাটি ব্যবহারের অনুপযোগী হলে, এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করা উচিত।

See also  দারাজ মল - এর পণ্য কত দিনের মধ্যে রিটার্ন করা যায়?

যেভাবে ব্যবহার করবেন না

কবরস্থানে জাতীয় পতাকা নামানো বা স্পর্শ করা যাবে না। পতাকা কোনো ব্যক্তি বা জড়বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাবে না।পতাকা কখনই অনুভূমিক বা সমতলভাবে বহন করা যাবে না। সব সময় ঊর্ধ্ব এবং মুক্তভাবে থাকবে। বাংলাদেশের পতাকা কোনোকিছুর আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। তবে শর্ত থাকেযে, কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি পূর্ণ সামরিক মর্যাদাবা আনুষ্ঠানিতাসহ সমাধিস্থ করাহলে তার শব যানে পতাকা আচ্ছাদনের অনুমোদন করা যেতে পারে। কোনো কিছু গ্রহণ, ধারণ বহন বা বিলি করার নিমিত্তে পতাকা ব্যবহার করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা প্রদর্শনকরা বা জাতীয় পতাকার প্রতিযথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলে ওইব্যক্তিকে ২০১০ সালের ২০ জুলাই প্রণীত আইন অনুযায়ী ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা একবছরের কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

জাতীয় পতাকার অবমাননা করারঅর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারকরা। স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্বীকারকরা। আবেগের বসে জাতীয় পতাকা ব্যবহারকরতে গিয়ে অনেককষ্টে অর্জিত এ পতাকার প্রতি যদিঅবমূল্যায়ন করাহয়, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা কষ্ট পাবে। অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশস্বাধীন করেছেন। তাই জাতীয় পতাকারপ্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনকরা আপনার, আমার ও সবার নৈতিক দায়িত্ব।

আশাকরি উক্ত পোষ্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম সম্পর্কে ধারণা রাখেন। জাতীয় পতাকা নিয়ে আরও সকল পোষ্ট পড়তে নিচের দিকে ব্রাউজ করুন।

Leave a Comment